বৃক্ষ ও মানুষ
নতুন বাজারে আসা কয়েনের মতো চকচকে, ঝকঝকে
আর উজ্জ্বল একটা দিন, একেবারে অন্যরকম
এইরকম দিনে কি জানি কি হয়, কখনো কখনো
আমাদের অন্দরমহল বেমালুম হাতছাড়া হয়ে যায় ।
খুব সকালবেলায় শয়নকক্ষের গবাক্ষ গলে
একটা দূরের মতো স্থানে তাকাতেই বোধ হলো
শাল্প্রাংশু আর সুদর্শন একটা লেলেন্ড সাইপ্রেস
তার কোন আকৃতির ঘন পত্রপল্লব মেলে ধরেছে
মানব হাতের তালুর মতো করে……
পার্শ্ববর্তিনী ডাউনি বার্চের পানে
কিছু একটা অনুনয় বিনয় করছে সে।
দ্বিতীয়বার নেত্রপাত করতে বুঝলুম
লেলেন্ড ডাউনিকে প্রেম নিবেদন করছে
বলছে
দাও দাও দাও……
বাইরে মিষ্টি আর নরমস্বভাবের দেখতে
অথচ ভেতরে ভেতরে ভীষণরকম কঠিন
ডাউনি বার্চের প্রান্তের দিকে তীক্ষ্ণ হয়ে আসা
ত্রিকোনাকৃতি পাতাগুলোর নৃত্যভঙ্গী দেখে মনে হলো
ওগুলো যেন হাত নেড়ে নেড়ে বলছে
না না না না…।
ছোঁড়াটাও নাছোড়বান্দা
গুরুমন্ত্রের মতো বিরতিহীন আওড়েই চলেছে
দাও দাও দাও…
অন্যদিকে ডাউনি তার সম্মতি ঝুলিয়ে রেখে
প্রতিত্তরে বলছে
না না না না…।
এই দরকষাকষি অনেকক্ষণ ধরে চলতে থাকলো
দাও দাও দাও
না না না না
দাও দাও দাও
না না না না।
আর দোঁহের ভাব বিনিময়ের পদাবলী
মৃদুমন্দ গ্রীষ্মের বাতাস তার ভাষার অংশ করে
ফুলরেণুর মতো ছড়িয়ে দিতে থাকলো চারিধারে।
এরইমধ্যে সকলের দৃষ্টির অলক্ষ্যে
উপরের দিকে দুটির একটা দুটো শাখা
আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছিল একে অপরকে
পার্কের বেঞ্চে বসে প্রেমিকযুবা
আলগোছে যেমন ছুঁয়ে দিতে চায় প্রেমিকার
হঠাৎ নিঃসাড় হয়ে যাওয়া আঙ্গুল।
নীচে ঘাপটি মেরে
তাদের এ মান অভিমানের খেলা দেখছিল
একটা কমন জুনিপার, সে ছিলো খুব চুপচাপ।
অনেকটা জায়াগাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা
প্রতিবেশী আরো দন্ডায়মান বৃক্ষেরা
বিষয়টা উপভোগ করছিলো যার যার মতো করে
কেউ কেউ কৌতূহলোদ্দীপক প্রতিক্রিয়াও দেখাচ্ছিল।
একটা ওয়াইল্ড চেরী আর একটা বার্ড চেরী মনে হলো
তুমুল হাততালি দিয়ে উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছে
প্রাচীন ইংলিশ ওকটা যেনো হারিয়ে ফেলেছে
তাকে তার সুদূর অতীতে
তার কেবলই মনে পড়ে যাচ্ছে যৌবনকালের স্মৃতি
তাকে ধীরে ধীরে ঘিরে ধরছে নস্টালজিয়ার সুখমেঘ।
হেজেল আর ক্র্যাক উইলোকে খুব খুশী খুশী
আর সুখী সুখী দেখাচ্ছিলো
মাঙ্কি পাজেলের চিরসবুজ, স্পাইকি
লম্বা লম্বা আঙ্গুলের মতো পাতাগুলো
একটা আরেকটাকে ধাক্কা মেরে
কি যেনো একটা বিশেষ ইঙ্গিত করছিলো
মহল্লার বখাটের দল যেমন কনুই এর ধাক্কায়
আড্ডার সাথীদের জানান দেয় ওই দেখ দেখ
গলির রাস্তায় শুরু হয়ে গেছে
আরাধ্য অষ্টাদশীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ।
সেদিনই প্রথম স্পষ্ট অনুভব করলাম
দমকা বাতাস বইলে শুরু করলে
এক একটা গাছ এক একটা বিশেষ ভঙ্গীতে নেচে উঠে
কোনটা বুঝি ব্যালে, কোনটা কনটেম্পরারী
কোনটা হিপ হপ, কোনটা ট্যাপ, কোনটা জ্যাজ
কোনটা আবার মডার্ণ, কোনটা ফিউসন
বৃক্ষনৃত্যের একটা কোলাজ ভিডিও বানিয়ে
ইউটিউবে ছেড়ে দিতে পারলে কিন্তু বেশ হতো!
সক্কাল সক্কাল গাছেদের এইসব দুরন্তপনা দেখতে দেখতে
সিদ্ধান্তটা তখনই নিয়ে ফেললাম
গাছ হয়ে নয়
এই জনমে যদি না পারি
মানুষ হয়ে বৃক্ষদের ভাষাটা পুরোপুরি ধরে ফেলবার জন্য
আরো একবার
মানুষের আকৃতিতেই জন্মাবো
বৃক্ষের ভাষা বুঝতে পারে এমন দরদী আর সংবেদনশীল প্রাণীতো
বিধাতা দ্বিতীয়টি সৃষ্টি করেননি।